SmartBangali

কঠোর ভাবে কর্মে বিশ্বাসী

চোখের স্টেম সেল ব্যবহার করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন চিকিৎসকরা — চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সাফল্য

Share your Knowledge

চোখের স্টেম সেল ব্যবহার করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন চিকিৎসকরা — চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী সাফল্য

চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারায়। এবার বিজ্ঞানীরা সেই হারানো দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন রোগীর নিজের চোখের স্টেম সেল ব্যবহার করে। এটি চোখের চিকিৎসায় এক বিশাল সাফল্য।

কীভাবে কাজ করে এই চিকিৎসা?

আমাদের চোখের কর্নিয়া স্বচ্ছ পর্দার মতো, যা আলো ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করে। যদি এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা পোড়ে যায়, তবে চোখে ঝাপসা দেখা বা সম্পূর্ণ অন্ধত্বও দেখা দেয়।

এই নতুন চিকিৎসায়:

রোগীর সুস্থ চোখ থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়।সেই স্টেম সেল থেকে তৈরি হয় কর্নিয়াল কোষ।এই কোষগুলো দৃষ্টিহীন চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়।কিছু মাসের মধ্যেই কর্নিয়া আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে।

চিকিৎসার পেছনে থাকা বিজ্ঞান

এই গবেষণাটি প্রথম বার সফলভাবে করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষায়িত চক্ষু গবেষণা কেন্দ্রে। এটি মূলত লিম্বাল স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন নামে পরিচিত।লিম্বাস হচ্ছে চোখের একপ্রান্তে থাকা একটি অংশ, যেখান থেকে কর্নিয়ার কোষ তৈরি হয়।যদি এটি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন কর্নিয়া নিজে নিজে আর সুস্থ হতে পারে না।গবেষকরা সেই অংশ থেকেই কোষ নিয়ে একটি চোখে প্রতিস্থাপন করেছেন, এবং সফলভাবে রোগীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে এনেছেন।

এই প্রযুক্তির গুরুত্ব

এই চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ কর্নিয়া-বিধ্বস্ত মানুষের জন্য আশার আলো:

✅ ডোনার ছাড়াই নিজের দেহ থেকেই চিকিৎসা সম্ভব

✅ কম রিজেকশন রিস্ক, কারণ রোগীর নিজের কোষ ব্যবহৃত

✅ দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চোখের জন্য

কাদের জন্য এই চিকিৎসা উপযুক্ত?

এই চিকিৎসা মূলত তাদের জন্য:যাদের একটি চোখ সম্পূর্ণ সুস্থ অন্য চোখে রাসায়নিক পোড়া বা দুর্ঘটনাজনিত কর্নিয়া ক্ষতি হয়েছে l

যাদের কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট বারবার ব্যর্থ হয়েছে l

কোন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠান যুক্ত?

Massachusetts Eye and Ear, Boston (Harvard Medical School–এর সাথে যুক্ত)

এই কেন্দ্র পরিচালিত করেছে “Cultivated Autologous Limbal Epithelial Cell (CALEC)” নামে পরিচিত একটি নতুন পদ্ধতি, যেখানে রোগীর নিজের চোখের লিম্বাল স্টেম সেল নিয়ে তা ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ব্যবহার করা হয় ।২০১৮ সালে প্রথম রোগীর উপর এই পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু হয়; এরপর পর্যায়ক্রমে মোট ১৪ রোগীর সফল ট্রান্সপ্লান্ট হয়, এবং ১৮ মাসে তারা এটির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে ।

ট্রায়ালের ফলাফল – কী জানতে পারি?

14 জন রোগী তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যারা মাত্র এক চোখে কর্নিয়া ক্ষতিপূরণে সীমাবদ্ধ ছিল।

১৮‑মাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়: ৫০% রোগীর ন্যূনতম ৩ মাসে কর্নিয়া সম্পূর্ণভাবে পুনর্নির্মাণ পায়,১২‑মাসে ৭৯%, এবং ১৮‑মাসে ৭৭% — সবমিলে সফলতার হার প্রায় **৯২–৯৩%** ।ওষুধ ছাড়াই, অনেকের চোখের পৃষ্ঠ স্বাভাবিক হয়েছে আর দীর্ঘমেয়াদে পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা গেছে।

নিজের চোখের কোষ দিয়েই দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার এই চমকপ্রদ সাফল্য আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করল। এটি শুধু বিজ্ঞান নয়, মানবিকতার এক শক্তিশালী নিদর্শন।

Author


Discover more from SmartBangali

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Discover more from SmartBangali

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading