🧧 পরিচিতি:
ভারতের একমাত্র চায়নাটাউন অবস্থিত আমাদের এই প্রিয় কলকাতায়। দুই শতাব্দীরও বেশি পুরনো এই এলাকাটি আজও বহন করে চলছে চীনা ঐতিহ্য, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির নিদর্শন। অথচ আজও বহু মানুষ জানেন না টেরেট্টা বাজার (Tiretta Bazaar) বা ট্যাংরা (Tangra) এলাকায় গড়ে ওঠা এই ঐতিহাসিক অধ্যায় সম্পর্কে।
চায়নাটাউনের জন্মকথা:
১৭৮০ সালের দিকে প্রথম চীনা অভিবাসীরা কলকাতায় আসেন।তাদের অধিকাংশই ছিলেন হাক্কা (Hakka) সম্প্রদায়ের, যারা মূলত কুলি, চর্মশিল্প ও কাঠের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।ব্রিটিশ আমলে কলকাতার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে চীনারা একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন।টেরেট্টা বাজার ও পরে ট্যাংরা এলাকায় তৈরি হয় চীনের মতন এক নিজস্ব ঐতিহাসিক শহর এই ভারতে মধ্যেই।
টেরেট্টা বাজারের চাইনিজ ব্রেকফাস্ট:
আজও রোজ ভোরে, বিশেষ করে রবিবারে, টেরেট্টা বাজারে বসে চায়নিজ স্ট্রিট ফুডের বিশেষ বাজার।সকালের দিকে আপনি পাবেন: চাইনিজ পোরিজ (Rice Congee), চিকেন বা প্রন বানস, ডিম সেদ্ধসহ ফ্রায়েড নুডলস, মোক টো (Mo To) — একটি বিশেষ হাক্কা খাবার
চীনা মন্দির ও ঐতিহ্য:
টেরেট্টা বাজারে এখনো আছে ৫টিরও বেশি প্রাচীন চীনা মন্দির: সবচেয়ে প্রাচীন মন্দিরটি হলো Sea Ip Church, এছাড়াও আছে Nam Soon Church, Toong On Church, Gee Hing Church ইত্যাদি, এই মন্দিরগুলি মূলত হাক্কা ও ক্যান্টনিজ গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত, এবং বহু পুরনো চীনা ধর্মীয় রীতি আজও পালিত হয়।
Tangra – নিউ চায়নাটাউন:
ট্যাংরা এলাকার কথা না বললে চায়নাটাউন সম্পূর্ণ হয় না। আগে এখানে ২০০+ ট্যানারি ছিল যা এখন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।এখানেই গড়ে ওঠে Kolkata-Chinese fusion style রান্না — যাকে আমরা বলি “Indian Chinese” cuisine।চিকেন হাক্কা নুডলস, চিলি চিকেন, সিজলিং রাইস— এই সবই শুরু ট্যাংরা থেকেই!
এক সময়ে যেখানে ২০,০০০-এর বেশি চীনা বংশোদ্ভূত মানুষ বাস করতেন, এখন সংখ্যাটা নেমে এসেছে মাত্র কয়েক হাজারে।আধুনিকতা, মাইগ্রেশন এবং চর্মশিল্প বন্ধ হওয়ায় আজ এই চায়নাটাউন হারিয়ে যেতে বসেছে।চায়নাটাউন বাঁচাতে আজ নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে — যেমন: ফুড ফেস্টিভ্যাল, হেরিটেজ ওয়াক, এবং লোকাল গাইডেড ট্যুর। ধর্মতলা থেকে মাত্র 5 মিনিটের দূরে অবস্থান করছে এই টেরেট্টা বাজার
চায়নাটাউন শুধু একটি এলাকা নয় — এটি কলকাতার বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যের এক জীবন্ত নিদর্শন।এই অঞ্চল আমাদের বলে দেয়, কিভাবে কলকাতা হয়ে উঠেছিল একটি বৈশ্বিক সংস্কৃতির মিলনস্থল।
