চা এমন একটি পানীয় যা সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। ইতিহাস অনুযায়ী, এটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয় চীনের শাং রাজবংশের সময়কালীন একটি ওষুধ হিসেবে। ১৭শ শতকে এটি ব্রিটেনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং ব্রিটিশরাই পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের উৎপাদন ও পান সংস্কৃতির বিস্তার ঘটায়।আজকের দিনে, ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চা উৎপাদনকারী দেশ, এবং আশ্চর্যজনকভাবে, উৎপাদিত চায়ের ৭০% এর বেশি নিজ দেশের মানুষরাই পান করে থাকেন। আমরা অনেকেই দার্জিলিং চা, আসাম চা কিংবা গ্রিন টি সম্পর্কে শুনে থাকি, তবে আজকের আলোচনার বিষয় শুধুমাত্র ব্ল্যাক টি।
ব্ল্যাক টি কী?
ব্ল্যাক টি তৈরি হয় Camellia sinensis নামক গাছের পাতা থেকে। এটি সম্পূর্ণ অক্সিডাইজড চা, যার কারণে এর রঙ গাঢ় হয় এবং স্বাদে তীব্রতা থাকে। এই অক্সিডাইজেশন প্রক্রিয়াটি চা প্রস্তুতকারকরা সতর্কতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করেন, যাতে স্বাদ ও গুণগত মান বজায় থাকে।
ব্ল্যাক টি প্রস্তুতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে:
উইলটিং (Wilting): তাজা পাতা নরম করার প্রক্রিয়া
ব্রুইজিং ও রোলিং (Bruising & Rolling): পাতার গঠন ভেঙে ফেলে অক্সিডাইজেশন শুরু করা,
অক্সিডাইজেশন (Oxidation): পাতাগুলিকে বাতাসে রেখে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো ,
ড্রায়িং (Drying): চায়ের আর্দ্রতা সরিয়ে সংরক্ষণের উপযোগী করা এই প্রক্রিয়ায় পলিফেনল অক্সিডেজ এবং পারঅক্সিডেজ নামক এনজাইম পাতার রাসায়নিক উপাদান ভেঙে দেয়, যার ফলে এর বাদামী রঙ ও চেনা সুগন্ধ তৈরি হয়।
ব্ল্যাক টি-এর উপকারিতা স্বাদ ছাড়াও, ব্ল্যাক টি বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য প্রশংসিত:
১. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ব্ল্যাক টি-তে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে।
২. হৃদ্রোগ প্রতিরোধে সহায়ক:- ব্ল্যাক টি নিয়মিত পান করলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ৩ কাপ বা তার বেশি ব্ল্যাক টি পান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
৩. ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস:- কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ব্ল্যাক টি-তে থাকা উপাদানগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক :- নিয়মিত এবং সীমিত পরিমাণে ব্ল্যাক টি পান রক্তচাপ কমাতে কার্যকর হতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা :- ব্ল্যাক টি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে ও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৬. স্নায়ুবিক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্ল্যাক টি নিয়মিত পান করলে পারকিনসনস ডিজিজ এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এর ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে।—
অতিরিক্ত পান করলে হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদিও ব্ল্যাক টি উপকারী, তবে অতিরিক্ত পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দিনে ৪-৫ কাপের বেশি পান করলে ক্যাফেইনের কারণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে: ঘুমের সমস্যা, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া মাথাব্যথা বমি বমি ভাব বা বমি, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া)।
ব্ল্যাক টি একটি বহুল জনপ্রিয় পানীয়, যা শুধু স্বাদের জন্য নয় বরং তার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যও পরিচিত। তবে যে কোনো ভালো জিনিসের মতোই, এটি মিতপর্যায়ে পান করাই শ্রেয়। সঠিকভাবে এবং সীমিত পরিমাণে পান করলে, ব্ল্যাক টি একটি সুস্থ জীবনধারার অংশ হতে পারে।